বেঁধে দেওয়া দামকে বৃদ্ধাঙ্গুলি

পর্তুগাল বাংলা নিউজপর্তুগাল বাংলা নিউজ
  প্রকাশিত হয়েছেঃ  ০৮:০৭ AM, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সরকার পাঁচটি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল গত বৃহস্পতিবার। প্রতি পিস ডিমের দাম ঠিক করা হয়েছিল ১২, পেঁয়াজের কেজি ৬০-৬৫, আলুর কেজি ৩৫-৩৬, খোলা চিনির কেজি ১২৫ এবং প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম ধরা হয় ১৬৯ টাকা। দাম নির্ধারণের পর এক সপ্তাহ হয়ে গেলেও সরকারের বেঁধে দেওয়া ওই দামে মিলছে না এসব পণ্য। সরকারের ওই দামের ধারেকাছের মূল্যেও ওইসব পণ্য কিনতে পারছেন না ক্রেতারা।

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রতি পিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩-১৪ টাকায়। হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়, আর এক ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৫৫ টাকায়। অথচ সরকারি রেট অনুযায়ী একটি ডিম বিক্রি হওয়ার কথা ১২ টাকায়, হালি ৪৮ টাকা এবং ডজন বিক্রি হওয়ার কথা ১৪৪ টাকায়। অর্থাৎ সরকারের বেঁধে দেওয়া দামের চেয়ে প্রতি পিস ডিম ১-২ টাকা বেশি করে বিক্রি হচ্ছে। আর ডিমের হালি ২-৭ এবং ডজনে ৬-১১ টাকা বেশি করে বিক্রি হচ্ছে।

সরকারের দামে ডিম বিক্রি করছেন না কেন জানতে চাইলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের খুচরা ডিম ব্যবসায়ী এবং মেসার্স উম্মে হাবিবা ট্রেডার্সের মালিক মো. লিটন সময়ের আলোকে বলেন, পাইকারি বাজারে আমরা তো কম দামে ডিম কিনতে পারি না। তা হলে কীভাবে আমরা কমে বিক্রি করব। পাইকারি বাজার থেকে ১০০ ডিম আমাদের কিনতে হয় ১ হাজার ১৫০ টাকায়। এতে প্রতি পিসের দাম পড়ে ১১ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে পরিবহন ব্যয়সহ আনুষঙ্গিক ব্যয় ধরলে প্রতি পিস ডিমের দাম ১২ টাকার ওপরে পড়ে যায়। আমরা বিক্রি করছি ১৩ টাকা পিস। সুতরাং পাইকারি বাজারে কমলে আমরাও ডিম কম দামে বিক্রি করতে পারব। তবে ভারত থেকে ডিম আমদানির যে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাতে দাম কমার কথা। সে দেশ থেকে ডিম দেশে এলেই ডিমের দাম কমবে।

সরকার আলুর কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে খুচরা মূল্য ৩৫-৩৬ টাকা। অথচ এখনও পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৪৪-৪৫ টাকা। আর খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকায়। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু ব্যবসায়ী মেসার্স মক্কা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী কাইয়ুম বেপারি সময়ের আলোকে বলেন, বগুড়ার হিমাগার থেকে প্রতি কেজি আলু আমাদের কিনতে হয় ৩৬ টাকায়। এর সঙ্গে দুই জায়গার লেবার খরচ, ট্রাক ভাড়া এবং আড়ত খরচসহ সব আনুষঙ্গিক ব্যয় ধরলে কেজিতে আরও ৫ টাকা যোগ হবে। এতে করে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ে যায় ৪১-৪২ টাকা। আমরা বিক্রি করছি ৪৩-৪৪ টাকায়। সুতরাং আসল জায়গায় আলুর দাম কমাতে হবে। অর্থাৎ হিমাগারে যতক্ষণ না আলুর দাম না কমবে ততক্ষণ পাইকারি ও খুচরা বাজারে কমবে না দাম।

এখন পেঁয়াজের বাজার সবচেয়ে বেশি টালমাটাল অবস্থা। সরকারি খুচরা পর্যায়ে দেশি পেঁয়াজের বিক্রি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে ৬০-৬৫ টাকা। অথচ এখনও পাইকারি বাজারেই প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৭০-৭৪ টাকায়। আর ভারতীয় মোটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৪-৫৫ টাকায়। এই পেঁয়াজ খুচরা বাজারে গিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী ও মেসার্স কুতুবপুর বাণিজ্যালয়ের বিক্রেতা মো. আলাউদ্দিন সময়ের আলোকে বলেন, আমি ১৯৮২ সাল থেকে এই বাজারে পেঁয়াজ-রসুনের ব্যবসা করি। এই দীর্ঘদিনে পেঁয়াজ নিয়ে এতটা আতঙ্ক নিয়ে কখনো ব্যবসা করিনি। কারণ এখন পেঁয়াজের বাজার গিরগিটির মতো রং বদলায়। বাজারে চরম অস্থিরতা চলছে। এর বাইরে প্রতিদিন সরকারি বিভিন্ন সংস্থা অভিযানে আসছে এবং আমাদের জরিমানা করছে। আমরা সবসময় আতঙ্কে থাকি। কিন্তু আমাদের কি করার আছে। আমরা পেঁয়াজ নিয়ে আসি পাবনা এবং ফরিদপুর থেকে। সেখানেই তো পেঁয়াজের দাম এখনও অনেক বেশি। সরকার খুচরা বাজারে যে ৬৫ টাকা মূল্য বেঁধে দিয়েছে। কিন্তু ফরিদপুর ও পাবনার মোকামেই তো এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬৫-৬৭ টাকা কেজিতে। তা হলে আমরা কি করে কম দামে বিক্রি করব। সরকার সেখানে যাক, আগে স্থানীয় মোকামে দাম কমাক। তা হলে সব জায়গায় দাম কমে যাবে।

অন্যদিকে সরকার চিনির দাম বেঁধে দিয়েছিল খোলা ১২৫ এবং প্যাকেটজাত ১৩৫ টাকা। তবে এ দামেও চিনি মিলছে না কোথাও। তার চেয়ে বড় কথা হলো, বাজারে চিনির সরবরাহ অনেক কমিয়ে দিয়েছেন মিল মালিকরা। পাঁচ দোকান ঘুরে হয়তো এক দোকানে মিলছে চিনি। খোলা চিনি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়। প্যাকেটজাত চিনি দশ দোকান ঘুরে যদিও মিলছে তার জন্য ক্রেতাকে গুনতে হয় ১৪০-১৪৫ টাকা।

অবশ্য ব্যতিক্রম দেখা গেছে ভোজ্য তেলের ক্ষেত্রে। সরকারি এক লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ১৬৯ টাকা। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এই দামেই বিক্রি হচ্ছে ভোজ্য তেল। এ ছাড়া ৫ লিটার এবং ২ লিটার সয়াবিন এবং খোলা সয়াবিনও বিক্রি হচ্ছে সরকারি নির্ধারিত দামে।

আপনার মতামত লিখুন :