সোমবার দিবাগত রাত ২টা ৪৮মিনিটে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিথা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। হতাহতরা সবাই উদয়নের ট্রেনের যাত্রী।
অস্থায়ী তথ্যকেন্দ্র থেকে নিহত ১৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তারা হলেন- চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম রাজারগাঁওয়ের আবদুল জলিলের ছেলে মজিবুর রহমান (৫৫), চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ ঈশানপুরের মঈন উদ্দিনের স্ত্রী কাকলী (২০), হবিগঞ্জের বাহুলার ইয়াছিন আরাফাত (১২), হবিগঞ্জের সৈয়দাবাদের আজমতউল্লাহের ছেলে মো. রিপন মিয়া (২৫), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের তীরগাঁওয়ের মৃত আবদুল হাশিমের ছেলে সুজন আহমেদ (২৪), মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের মুসলেম মিয়ার স্ত্রী জাহেদা খাতুন (৪৮), চাঁদপুরের হাজিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিমরাজারগাঁওয়ের মজিবুর রহমানের স্ত্রী কুলসুম বেগম (৩০), হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার মদনমূরকের আইয়ুব হোসেনের ছেলে আল আমীন (৩০), চাঁদপুরের হাইমচরের ঈশানপুরের জাহাঙ্গীরের মেয়ে মরিয়ম বেগম (৬), হবিঞ্জের আনোয়ারপুরের আলী মো. ইউসুফ (৩২), হবিগঞ্জের চুনারুঘাটের আহমদাবাদের আবদুস সালামের স্ত্রী পিয়ারা বেগম, হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার বড়বাজারের সোহেলের মেয়ে আদিবা (২), ব্রাহ্মণবাড়িয়া সোহেল রানার মেয়ে সোহামনি (৩), নোয়াখালীর মাইজদীর শংকর হরিজনের ছেলে রবী হরিজন (২৩) এবং চাঁদপুরের উত্তর বালিয়ার বিল্লাল মিয়াজির মেয়ে ফারজানা (১৫)।
রেলওয়ে স্টেশন, প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা আন্তঃগর ট্রেন ঢাকাগামী তূর্ণা নিশিতা রাত ২টা ৪৮ মিনিটে শশীদল রেলওয়ে স্টেশন অতিক্রম করে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনের দিকে রওনা করে। মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার স্টেশনে প্রবেশের আগেই আউটারে থামার জন্য লালবাতি জ্বালিয়ে সংকেত দেয়। অপরদিকে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস কসবা রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে মন্দভাগ রেলওয়ে স্টেশনে প্রবেশ পথে স্টেশন মাস্টার তাকে মেইন লাইন ছেড়ে দিয়ে ১ নম্বর লাইনে আসার সংকেত দেয়। ওই ট্রেনের চালক ১ নম্বর লাইনে প্রবেশ করার সময় ছয়টি বগি প্রধান লাইনে থাকতেই অপর দিক থেকে আসা তূর্ণা নিশিতা ট্রেনের চালক সিগনাল (সংকেত) অমান্য করে দ্রুত গতিতে ট্রেন চালায়। এ সময় উদয়ন ট্রেনের মাঝামাঝি তিনটি বগির সাথে তূর্ণা নিশিতার ইঞ্জিনের সংঘর্ষ হয়। এতে উদয়ন ট্রেনের তিনটি বগি দুমড়ে মুচড়ে যায়। উদয়ন ট্রেনের ১৬ জন যাত্রী মারা যান এবং শতাধিক নারী পুরুষ যাত্রী আহত হয়েছেন।
ঘটনার পর থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম-সিলেট, নোয়াখালী-ঢাকা, নোয়াখালী-সিলেট রেলপথে সবধরনের ট্রেন চলাচল ৮ ঘণ্টা বন্ধ ছিল। রেলওয়ে ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আখাউড়া ও লাকসাম থেকে রিলিফ ট্রেন এসে উদ্ধার কাজ চালায়। সেই সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিজিবি, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, জেনেটিক কম্পিউটার একাডেমী মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, সিডিসি মুক্ত স্কাউট গ্রুপ, স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো উদ্ধার কাজে সহযোগিতা করে।
রেল সচিব মোহাম্মদ মোফাজ্জল হোসেন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। রেলওয়ের পক্ষ থেকে ৪টি ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১টি তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। রেলের একটিতে প্রধান যান্ত্রিক প্রকৌশলী (পূর্বাঞ্চল) মিজানুর রহমানকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে চার সদস্যের একটি ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মিতু মরিয়মকে প্রধান করে ৩ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সিভিল সার্জন শাহ আলম জানান, ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের সদর, কসবা ও আখাউড়া হাসপাতালে যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসক হায়াত উদ দৌলা খান জানান, প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে মরদেহ দাফন-কাফনের জন্য এই টাকা দেয়া হচ্ছে।
এদিকে রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার মন্দবাগ রেলওয়ে স্টেশনে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে এসেছি। দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে নিহতদের প্রত্যেকের পরিবারকে ১ লাখ করে টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। তাৎক্ষণিকভাবে তূর্ণা নিশিথার লোকোমোটিভ মাস্টার ও সহকারী মাস্টারকে বরখাস্ত করা হয়েছে।’
ভয়াবহ এ ট্রেন দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরী পৃথক শোক বার্তায় নিহতদের রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেছেন এবং হতাহতের সর্বাত্মক সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
সূত্র : ইউএনবি
pbnews/kamal