মীর আব্দুল হালিম ঢাকা থেকেঃ বাংলাদেশের প্রথম শ্রেণীর নাগরিক ও মহান পেশার সাথে জড়িত আইনজীবীরা ইদানীংকালে ঋণে ও দানে করুন আকালে পড়েছে। ঋণ চেয়েও তারা পাচ্ছে না কিংবা দিব দিব হলেও দিচ্ছে না তাদের নিজের তৈরি করা সংস্থা বার এসোসিয়েশন বা নিজেদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বার কাউন্সিল। আর ব্যাংকগুলো তো আগে থেকেই আইনজীবীদেরকে ঋণ প্রদানে অনীহা প্রকাশ, দৃশ্যমান ঘোষণা না থাকলেও গোপনে কর্মীদেরকে নির্দেশনা দেয়া আছে যে পুলিশ, আইনজীবী, সাংবাদিক ও রাজনীতিবিদ এদেরকে ঋণ প্রদানে কঠোরতা অবলম্বন করা হইবে।
ব্যাংকে একটি নীতি আছে আমানতের বিপক্ষে ঋণ প্রদান যেখানে তারা সর্বোচ্চ ৯০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ খুবই দ্রুত প্রক্রিয়া করে থাকে। আইনজীবী সমিতিতে আইনজীবীদের নিজস্ব চাঁদা জমা থাকে যা আমানতের মতোই তা থেকে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা (বিনা সুদে ২ বছর মেয়াদী) পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার ঘোষণা ঢাকা বার এসোসিয়েশন দিয়েছে তা বাস্তবায়ন করতেই তাদের ২৫ মাস লাগবে কিনা কে জানে? সূত্রে প্রকাশ ৭৫১১ টি ঋণ আবেদন জমা পড়েছে তা যাচাই বাছাই করে পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতরণ করা হয় হতে পারে। কিন্তু পরবর্তী স্বভাব কখন হবে ? তীর্থের কাকের মত চেয়ে আছে অসহায় আইনজীবীরা, ততদিনে তাদের হতাশা ও কষ্টের পরিমান আনুপাতিক হারেই বেড়ে চলেছে।
অনেকের মনে সন্দেহ এই যাচাই বাছাই কীভাবে করা হবে, কোন মাপকাঠিতে এই ঋণ প্রদান করা হবে? আবেদনপত্রে কারো আর্থিক অবস্থা, পারিবারিক সদস্যসংখ্যা, তার ওপর নির্ভরশীল সদস্যসংখ্যা কিংবা তার জীবনাচরণে বর্তমান করোনা ভাইরাসের প্রভাব কি এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়নি । যা জানতে চাওয়া হয়েছে সাধারণ নাম ঠিকানা ওয়ব্যাংক হিসাব নাম্বার। অনেকেই মনে করেছেন এই ব্যাংক হিসাবের মাধ্যমে তাদের টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে। শুনেছি ঢাকা বার এসোসিয়েশন তার ২৫ হাজার সদস্যের কষ্ট লাঘবের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে জরুরী ভিত্তিতে ১০০ কোটি টাকা অনুদানের আবেদন করেছে। পাশাপাশি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের কাছে দুই কোটি টাকার অনুদানের জন্য চিঠি প্রেরণ করেছেন। এসব অনুদান পাবে কিনা জানিনা এবং সমিতির নিজস্ব তহবিল থেকে টাকা খরচ করার বিষয়ে অনেকের মতো আমিও সন্দিহান।
এভাবে অনুদান প্রদান করতে থাকলে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর এবং বার কাউন্সিলের দপ্তর হাঁপিয়ে উঠবে বলে মনে করি কারণ সারা দেশে প্রতিটি জেলায় এবং ঢাকাতে আরো কয়েকটি আইনজীবী সমিতি মিলে আরো ৬৫ টির মত আইনজীবী সমিতি রয়েছে তারা প্রত্যেকেই যদি কোটি কোটি টাকা অনুদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর কিংবা বার কাউন্সিলে আবেদন করে তাহলে কী একটা অবস্থা দাঁড়াবে চিন্তা করা যায়? চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল আইনজীবী সমিতি সমূহে কি অসহায় হয়ে পড়া আইনজীবী নেই?
এদিকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সমিতি ৫০ লক্ষ টাকার একটি ফান্ড ঘোষণা করেছে যা তারা সমিতির অসহায় সদস্যদের মাঝে বিনা সুদে তিন বছর মেয়াদে বিতরণ করবে। সূত্র মতে ২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে এবং আগামী সপ্তাহে কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত নেয়া হবে কী পরিমাণ টাকা আবেদনকারীর সদস্যদেরকে দেয়া হবে। একই ধরনের অসুবিধা এখানেও হতে পারে। আবেদন গুলিকে কিভাবে অগ্রাধিকার দেয়া হবে এ ব্যাপারে কোনো নীতিমালা বা কোনো নির্দেশনা নেই এবং সাধারণভাবে এ প্রক্রিয়াযর স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে।
ঘোষিত ৫০ লক্ষ টাকা কে আবেদনকারীর সংখ্যা ২ হাজার দিয়ে ভাগ করলে প্রতি ভাগে ২৫,০০০ ভাগফল থাকে সুতরাং সমতা ও ন্যায় পরায়ণতার নীতিতে প্রতিটি সদস্যকে সমানভাবে টাকা ভাগ করে দিলে একজন সদস্যে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা ঋণ পেতে পারেন যা পরবর্তী তিন বছরের মধ্যে বিনা সুদে পরিশোধযোগ্য। অবশ্য এ সমিতির পক্ষে অনুদানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে কিংবা বার কাউন্সিলে আবেদনের কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এ হিসাব সঠিক হলে অনেকেই হয়তো ২৫ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করতে অনাগ্রহ প্রকাশ করতে পারে।
এবার আসি দানের কথায়, সমাজের চারিপাশে যখন বিত্তবান মানুষেরা এগিয়ে এসেছে, ব্যক্তিগত পর্যায়ে, বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে তারা সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, সেখানে আইনজীবী সমিতি সমূহের কিংবা নিয়ন্ত্রক সংস্থা সমূহের ক্ষেত্রে মনে হয় পড়েছে আকাল। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের রিলিফ ফান্ড রয়েছে একই ভাবে একই ধরনের ফান রয়েছে প্রায় সব আইনজীবী সমিতিতে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি, ঢাকা আইনজীবী সমিতি বা অন্যকোন আইনজীবী সমিতি অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে সম্প্রতি এরকম কোন খবর দেখিনি।
দান করার জন্য তো আইনজীবীরা টাকা জমিয়ে রেখেছে, সেই জমা টাকা দানের ক্ষেত্রে কেন এত আকাল পড়েছে বোঝা যাচ্ছে না। ইহাকেই বলে বার কাউন্সিল ও আইনজীবী সমিতি সমূহের নেতৃত্ব। প্রতিবার নির্বাচনের পূর্বে প্রতিশ্রুতি বন্যায় আমরা সবাই ভাসতে থাকি। ভাসতে ভাসতে আজ করুণা নদীর তীরে এক ফোঁটা পানির জন্য হাহাকার, গগনবিদারী নিরব চিৎকার শোনার মতো কোথাও কেউ নাই।
ফরিদপুরের গোবিন্দপুরে এক কৃষক কাশ্মীরি আপেল কুল চাষ করে ১০ মাসের ফলনে সে আয় করেছে ৬৫ লক্ষ টাকা। হাজার হাজার আইনজীবী উৎপাদন না করে বরং কৃষি উৎপাদনে জড়িত হলেও এত অসহায়ত্ব হবে না বলে মনে করি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন পড়ুয়া এক ছাত্রের কোয়েলের ফার্ম চালানো কিংবা কিছুকাল আগে এক ব্যারিস্টারের বগুড়ায় গবাদিপশুর ফার্ম করার খবর আশা জাগায় বটে। বিগত ৫০ বছরে আইনজীবীরা আইন শিখে, পড়ে, অনুশীলন করে অর্থনীতিতে কী পরিমাণ অবদান রেখেছে জানিনা তবে এত সংখ্যক আইনজীবী হওয়ার প্রয়োজন অনুভব করি না । আইন পড়ুন জ্ঞানী হউন, অন্য পেশায় যোগদান করুন স্বাবলম্বী হোন, তারপর পরবর্তী প্রজন্মকে পাঠান আইন পড়তে, যাতে তারা অসহায় না হয়, হাত পাততে না হয় কারো কাছে। আগেই শুনেছিলাম গরিবের জন্য আইন পেশা নয়।