আবু রাশেদ সিদ্দিকঃ
তাওহিদ এটা আরবি শব্দ। সর্বসম্মত ক্রমে যার আভিধানিক সরল অর্থ হলো- একত্ববাদ। ইসলামের পরিভাষায় তাওহিদ মূলতঃ- আল্লাহর নাম, সত্তা, গুনাবলী, ক্ষমতা ও অধিকারে মহান আল্লাহকে এক ও এককভাবে জানা বুঝা এবং অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিতে মানা।
তাওহিদের ধরণ বা রুপ সাধারণত তিন প্রকার-
১)- রুবুবিয়াতে একত্ববাদ।
রুবুবিয়্যাতে তাওহিদ বা রুবুবিয়্যাতে একত্ববাদ হলো- সকল ক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় সর্বোচ্চ ক্ষমতা ও চূড়ান্ত মালিকানা একমাত্র আল্লাহর গ্রহণ করা।
২)- উলুহিয়্যাতে একত্ববাদ।
উলুহিয়্যাতে তাওহিদ বা ইবাদাতে একত্ববাদের অর্থ হলো- জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক মেনে নেয়ার ভিত্তিতে সর্বাবস্থায় তাঁরই দাসত্ব, একমাত্র তাঁরই আইন-বিধানের আনুগত্য এবং তাঁরই উপাসনা করা।
৩)- আসমা ওয়াস সিফাতে একত্ববাদ বা আল্লাহর নাম এবং সকল প্রকার গুনাবলীতে তাওহিদ।
আল-কুরআন ও সহি হাদিসে বর্ণিত আল্লাহর সকল প্রকার গুনাবলীতে কোন প্রকার বিকৃত না করেই যথাযথভাবে বিশ্বাস করা ও মেনে নেয়া।
তাওহিদ বা একত্ববাদই আল্লাহর প্রতি ঈমানের মূল ভিত্তি। তাওহিদ ব্যাতিত আল্লাহর প্রতি ঈমান হবে না।
ঈমান গ্রহণের পূর্ব শর্তই হচ্ছে- তাওহিদের বিপরীত সকল কিছু অস্বীকার ও অমান্যের ঘোষণা দেয়া এবং খালেছ নিয়্যাতে আল্লাহর প্রতি ঈমানের ঘোষণা দিয়ে পর্যায়ক্রমে তা বাস্তবায়ন করতে থাকা।
আল্লাহর প্রতি ঈমান কি এবং কিভাবে আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হয়? প্রকৃত অর্থে ঈমানদার হতে হলে, সর্বপ্রথমে আমাদের বুঝতে হবে ঈমান কি এবং কার প্রতি কিভাবে ঈমান আনলে ঈমানের দাবিতে সত্যিকার ঈমানদার হওয়া যায়।
এ মর্মে মহাগ্রন্থ আলকুরআনের বানী ও রাসুল (সাঃ) এর অসংখ্য হাদীস থেকে প্রসিদ্ধ একটি হাদীস বর্ণনার পূর্বে, ঈমান সম্পর্কৃত সংক্ষিপ্ত কিছু কথা স্মরন করে দিচ্ছি। ঈমান” আরবী শব্দ, অভিধানিক অর্থে ঈমান” শব্দের অর্থ হচ্ছে- বিশ্বাস স্থাপন করা। প্রকৃত অর্থে ঈমান হচ্ছে- সঠিক জ্ঞানের ভিত্তিতে অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস। ঈমানের সাধারণ অর্থ হলো-
কারো উপর বিশ্বাস ও আস্থা স্থাপন করা এবং সে কারণে তার কথাকে সত্য বলে মান্য করা। মানুষ তখনই কারো কথাকে সত্য বলে গ্রহণ করে। যখন তার সত্যবাদিতা সম্পর্কে অটল- বিশ্বাস রাখে। বিশ্বাস ও আস্থাই হলো ঈমানের মুল কথা।ইসলামী শরীয়া’র, পরিভাষায় হজরত মুহাম্মদ সা: আল্লাহর নিকট হতে যে কিতাব (অহীর সমষ্টি) প্রাপ্ত হন তাতে এবং তিনি যে পথ (তাঁর সুন্নাহ) প্রদর্শন করেছেন তাতে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করাই ঈমান। সরল অর্থে: যে কোন বস্তুকে তার আসল রুপে চিনে বস্তু হিসেবে স্বীকার করাটাও বস্তুর প্রতি ঈমান বলে। এবার আমরা ঈমান সম্পর্কৃত একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদীসের প্রাথমিক কিছু অংশ পর্যালোচনা করবো। যে হাদীসটি বোখারি ও মুসলিম গ্রন্থে কিতাবুল ঈমান অধ্যায়ে হাদীসে জিব্রাইল নামে খ্যাত আছে। উক্ত হাদীসে উমর (রাঃ) এর বর্ণনার মাধ্যমে ঈমান সম্পর্কে রাসুল (সাঃ) আমাদেরকে যা জানিয়েছেন-একদিন আগন্তুক এক ব্যাক্তি (যিনি প্রকৃতপক্ষে জিবরাইল (আ) ছিলেন এবং মানুষের রূপ ধারণ করে রাসূল (সা) এর কাছে এসেছিলেন। ) রাসূল (সা) কে জিজ্ঞেস করলো, ঈমান কি বলুন।
তিনি বললেন, তুমি আল্লাহ তায়ালাকে ও আখিরাতকে সত্য জানবে ও সত্য বলে বিশ্বাস করবে, আর এটাও বিশ্বাস করবে যে, পৃথিবীতে যা কিছুই ঘটবে, আল্লাহর পক্ষ থেকেই ঘটে, চাই তা ভালো হোক বা মন্দ হোক। এটাই ঈমান। (মুসলিম) উপরোক্ত হাদীসের পর্যালোচনায় মূল যে বিষয়টি প্রতিয়মান হচ্ছে সেটা হল, আল্লাহর প্রতি ঈমান এবং পরকাল বিশ্বাস সেই সাথে তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস আনয়ন। উপরোক্ত বিষয় গুলুর প্রতি তখনী ঈমান প্রমানিত হবে যখন কেহ নির্ভূল জ্ঞানের মাধ্যমে প্রকৃত পরিচয়ে উক্ত বিষয়ে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করবে। আল্লাহর প্রতি ঈমান কি? আল্লাহ হচ্ছে সার্বভৌম সত্বার সত্বাগত নাম, যার পরিচয় তিনি নিজেই দিয়েছেন, রব্ব দিয়ে। রব্ব হচ্ছে আল্লাহর অন্যতম প্রধান গুনবাচক নাম যার প্রকৃত অর্থ হল সার্বভৌম ক্ষমতার একমাত্র মালিক। সুতরাং জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র রব্ব (সার্বভৌম মালিক) হিসেবে জেনে, বুঝে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিতে মেনে নেওয়াই মুলত আল্লাহর প্রতি ঈমান। অতএব, ঈমানদার হতে হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র রব্ব মেনে নিয়ে (রাব্বুনাল্লাহ) ঘোষণার মাধ্যমে ঈমানদার হতে হবে।
আল্লাহকে একমাত্র রব্ব মেনে সেই রব্বের প্রতি ঈমান আনার বিষয়ে মহাগ্রন্থ আলকুরআনের গুরুত্বপূর্ণ সূরা – আল ইমরানের ১৯৩ নং আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন যে বিষয়টি জানিয়েছেন- হে আমাদের রব্ব আমরা একজন আহ্বানকারীর আহ্বান শুনে ছিলাম যিনি আমাদেরকে ঈমান আনার (ঈমানদার হওয়ার) জন্য দাওয়াত দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন (হে মানব সকল) তোমরা তোমাদের রব্বের প্রতি ঈমান আনো। অতপর আমরা (আমাদের রব্ব আল্লাহর প্রতি) ঈমান এনেছি।
উপরোক্ত আয়াতাংশের সংক্ষিপ্ত ব্যাখায়: আল্লাহ, বিশ্বমানব জাতিকে জানিয়ে দিচ্ছেন, আহ্বান কারী হচ্ছেন আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ সাঃ, এবং আহ্বান গ্রহনকারীরা হচ্ছেন, সাহাবায়ে কেরামগন। সুতরাং ঈমান আনতে হলে জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র রব্ব মেনেই আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে হবে। অর্থাৎ: সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে আল্লাহকে একমাত্র সার্বভৌম ক্ষমতার মালিক, আইন-বিধানদাতা ও নিরংকুশ কর্তা মেনে “রাব্বুনাল্লাহ” ঘোষণা করতে হবে। অতঃপর সেই রব্ব আল্লাহর আইন-বিধান মেনে চলার সিদ্ধান্ত করে, “আশহাদু- আল্লাহ ইলা-হা ইল্লাল্লাহ” অঙ্গীকার করতে হবে। এবং এর বাস্তবায়নে জীবনের সকল ক্ষেত্রে শর্তহীন আনুগত্য অনুসরন- অনুকরণ একমাত্র আল্লাহর রাসুল হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর করার অঙ্গীকার করতে হবে “আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসুলুল্লাহ” তবেই একজন ব্যাক্তি প্রকৃত অর্থে ঈমানদার হিসেবে স্বীকৃত হবে।
pbnews/n.i.Khan